বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ও বাস্তবায়ন: অগ্রগতি এবং করণীয়

সংবিধানে ১৫ ধারার বাধ্যবাধকতাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শুরু হয় খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্য রিলিফ হিসাবে প্রদানের মাধ্যমে। এক রক্তক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে কষ্টার্জিত বিজয় অর্জন ও ১৯৭৪ সালে দেশব্যাপি প্রলয়ঙ্করী বন্যা ও সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ এবং ক্রমাগত জলবায়ুজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশকে ৭০ দশকে মূলত রিলিফ কাঠামোর মধ্যে বেঁধে রেখেছিল। রিলিফ কাঠামোর পাশাপাশি ৭০ দশকের শেষে সীমিত পরিসরে ও ৮০’র দশকে ব্যাপক আকারে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, সম্পদ, অর্থ প্রদানের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করে। এ সময় অপ্রাতিষ্ঠানিকখাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সুযোগ গড়ে উঠে এবং এই কর্মসংস্থান বিশেষ করে মাটির কাজ যা গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে অবদান রাখে। এরপর ৯০’ দশকের পুরোটাই ছিল ব্যাপক আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান ব্যবস্থা থেকে দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির সূচনা, যা এখনও বিদ্যমান আছে। এ সময় যে বিশেষ কর্মসূচিগুলো দরিদ্র সাধারণের জন্য নেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলঃ দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ), কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতা বাড়ানো, ও ক্ষুদ্র ঋণ।

৮০’র দশকে দেখা গেলো যে কেবলমাত্র খাদ্য সহায়তা ক্ষুধা নিবারণে সহায়ক নয়। তাই এ সময় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচিগুলো হাতে নেওয়া হলো। বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) সহায়তায় ভিজিএফ কর্মসূচিকে পরিবর্তন করে আয়বর্ধনমূলক দুঃস্থ জনগোষ্ঠী উন্নয়ন (আইজিভিজিডি) কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৭ ও ‘৮৮’র দেশব্যাপী প্রলয়ঙ্করী বন্যার প্রেক্ষিতে রাস্তাঘাট, বাঁধ মেরামত, সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন মাটির কাজের সাথে সম্পর্কিত কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচি প্রসারিত করা হয়।

৯০ দশকের প্রথম দিকে নতুন কর্মসূচি যেমন একদিকে নেওয়া হয়, তেমনি খাদ্যের পল্লী রেশন ব্যবস্থা ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হয়। এই দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম সময়ে দুঃস্থ জনগোষ্ঠী যেন সরকারের সহায়তা পায়, সে জন্য কার্ড যা ভিজিএফ কার্ড নামে পরিচিত, এমন উদ্ভাবনীপন্থার প্রচলন করা হয়। ১৯৯৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যার সময় দেশব্যাপী খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো দেশে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে বয়স্ক, শারীরিকভাবে অক্ষম, ও দুঃস্থ মহিলাদের জন্য মাসিকভাতার প্রচলন করা হয়।

একবিংশ শতাব্দির প্রথম দশকে অতীত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে যুক্ত করে দারিদ্রতা থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় প্রথমবারের মতো অনেকগুলো কর্মসূচির সূচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি (আরএমপি), ও দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (ভিজিএফ) কর্মসূচি। এ সময় মঙ্গা ও চর অঞ্চলগুলোকে দারিদ্রের পকেট হিসাবে বিবেচনা করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর পরিধি ও আওতা বাড়ানো হয়।

নতুন শতাব্দির প্রথম দশকে আরও কতগলো কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তায় যুক্ত হয়। এগুলো আগে নেওয়া কর্মসূচিগুলোর ধারাবাহিকতার পরিবর্তিত কর্মসূচি যেমনঃ কর্মসংস্থানমূলক দুঃস্থজনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (আইজিভিজিডি), খাদ্য নিরাপত্তা ও দুঃস্থজনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (এফএসভিজিডি), অতি-দরিদ্র চিহ্নিতকরণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি (টিইউপি), সরকারের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুযোগ (রিইওপিএ), আরইআরএমপি-সহ আরও অনেক কর্মসূচি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এনজিও দ্বারা বাস্তবায়ন করা শুরু হয়। এ সময়ে সহস্রাব্দদের লক্ষ্য অর্জনের সাথে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে এনে সমাজে দারিদ্র্য ও অসমতা দূরীকরণে সহায়ক ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

Click on the image to download the document